তিতাস আর তার পিতা
গ্রামের নাম ছিল সৈয়দপুর। সেখানে বাস করত এক ছোট্ট মেয়ে, নাম তিতাস। তিতাসের বয়স দশ বছর, কিন্তু মনের দিক থেকে সে অনেক পরিণত। তার বাবার নাম ছিল শুনিল, পেশায় তিনি একজন কৃষক। তাদের ছোট্ট ঘর, সামান্য জমি আর গরুর গাড়ি - এটাই ছিল তাদের সব।
তিতাসের মা মারা গিয়েছিল অনেক আগেই। তাই তিতাস আর শুনিল একে অপরের জন্য সবকিছু ছিল। তিতাস তার বাবার কাজে সাহায্য করত, রান্না করত, এবং সন্ধ্যাবেলায় বাবার কোলে মাথা রেখে গল্প শুনত। শুনিল তার ছেলের প্রতি ছিল অত্যন্ত স্নেহশীল।
একদিন সকালে, শুনিল মাঠে কাজ করতে গিয়েছিল। তিতাস একা ঘরে বসে ছিল, হাতে তার মায়ের একটা পুরোনো চুড়ি। হঠাৎ করে একটা তীব্র বজ্রপাত হয়, সঙ্গে সঙ্গেই তিতাসের মনে একটা অশুভ আশঙ্কা জন্মায়। সে দৌড়ে মাঠে যায় এবং দেখে তার বাবা মাটিতে পড়ে আছে। তিতাসের কান্না বেরিয়ে আসে। শুনিল আর সাড়া দিচ্ছিল না।
তিতাস গ্রামবাসীদের ডাকল। সবাই এসে শুনিলকে বাড়িতে নিয়ে গেল। গ্রামের ডাক্তার এসে জানাল, শুনিল হঠাৎ স্ট্রোক করেছে। গ্রামের মানুষের সাহায্যে শুনিলকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিতাস হাসপাতালে তার বাবার পাশে বসে ছিল, তার ছোট্ট হাত দিয়ে বাবার হাত ধরে ছিল।
দিন গড়াল, তিতাসের বাবার অবস্থা ধীরে ধীরে ভালো হতে শুরু করল। ডাক্তার জানাল, সঠিক যত্ন আর ভালো খাবার পেলে শুনিল শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবে। গ্রামের মানুষজন সাহায্য করল, তাদের খাবার ও ওষুধের জোগান দিল।
শুনিল সুস্থ হয়ে ফিরে এল তার ছোট্ট ঘরে। তিতাস আনন্দে কেঁদে ফেলল। বাবাকে আবার কাছে পেয়ে সে যেন পৃথিবীর সমস্ত সুখ পেয়ে গেল। শুনিল তিতাসের মাথায় হাত রেখে বলল, "তুই আমার শক্তি রে বাব। তোর জন্যই আজ আমি বেঁচে আছি।"
তিতাস আর তার বাবা আবার সেই আগের মতো সুখে শান্তিতে জীবন কাটাতে লাগল। তাদের ভালোবাসা ছিল অটুট, যা কোনো ঝড়-ঝঞ্ঝা তাদের জীবন থেকে কেড়ে নিতে পারেনি। তিতাসের চোখে ছিল সপনো আর মনে ছিল অসীম সাহস। তারা জানত, যত বাধাই আসুক, একসঙ্গে থাকলে সবকিছু পার হওয়া সম্ভব।