Sunday, March 23, 2025
Monday, June 24, 2024
শিক্ষনীয় বিষয় চাদনী ও চন্দনের অমলিন ভালোবাসা- চাদনীর বিরহের জীবন কাহিনীঃ পার্ট-1
রাত গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। চাদনীর চোখে আজ ঘুম আসছে না। সে বসে আছে
জানালার পাশে, চাঁদের আলো তার মুখে পড়ছে। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এখন
মনে হচ্ছে এক বিরহের সাগর।
চাদনী আর চন্দন—এই নাম দুটি একসময় একসঙ্গে
উচ্চারিত হতো। তারা ছোটবেলা থেকেই একে অপরকে ভালোবাসত। তাদের ভালোবাসার
গল্প সবাই জানত। স্কুলের বন্ধুত্ব, কলেজের প্রেম, সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো
সুন্দর ছিল।
চাদনী আর চন্দনের জীবনের গল্প এক সুন্দর স্বপ্নের মতো
চলছিল। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদের জীবনকে ভেঙে দিয়েছিল। চন্দনের বাবা
একজন সরকারি চাকুরীজীবী ছিলেন। হঠাৎই তাকে ঢাকায় বদলি করা হয়। চন্দন চলে
যায় ঢাকায়। চাদনী গ্রামের ছোট্ট শহরে একা পড়ে থাকে।
চন্দন চলে
যাওয়ার পর থেকে চাদনীর জীবনে একটা শুন্যতা তৈরি হয়। শুরুতে তারা একে অপরের
সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। চিঠি, ফোনকল—সবকিছু দিয়েই তারা একে অপরকে অনুভব
করত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সবকিছু বদলে যেতে লাগল। চন্দনের ব্যস্ততা
বাড়তে থাকে, চাদনীর সাথে তার যোগাযোগ কমে যেতে থাকে।
একদিন চাদনী
খবর পেল, চন্দনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। এই খবরটা চাদনীকে ভেঙে চুরমার করে দেয়। চাদনীর মনের মধ্যে একটা ভয়ানক ঝড় বয়ে যায়। সে চন্দনকে ফোন করে। চন্দন জানায়,
সে বাবা-মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারেনি।
চাদনী কান্নায় ভেঙে
পড়ে। তার হৃদয় ভেঙে যায়। সে বুঝতে পারে, তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয়
মানুষটি তাকে ছেড়ে চলে গেছে। চন্দনের কথা মনে করে সে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে।
দিন কাটতে থাকে, কিন্তু চাদনীর জীবনে চন্দনের স্মৃতি গুলো অমলিন
থেকে যায়। সে প্রতিদিন চন্দনের পুরনো চিঠিগুলো পড়ে, পুরনো ছবিগুলো দেখে।
তার মনে হয়, চন্দন এখনো তার পাশে আছে।
একদিন, চাদনী একা বসে ছিল
তাদের পুরনো স্মৃতির স্থানে, যেখানে তারা প্রথমবার একে অপরের প্রেমে
পড়েছিল। সে হঠাৎই একটি চিঠি পায়। চিঠিটি চন্দনের। আহাদ লিখেছে, "চাদনী,
তোমাকে আমি কখনও ভুলতে পারিনি। আমার হৃদয়ের প্রতিটি কণায় তুমি আছো। আমার
জীবনে যা কিছু ঘটেছে, সব কিছুই আমার নিয়তি। আমি জানি, আমরা একসাথে থাকতে
পারিনি, কিন্তু তুমি আমার হৃদয়ে চিরকাল থাকবে।"
চাদনী চিঠিটা হাতে
নিয়ে কেঁদে ফেলে। সে বুঝতে পারে, চন্দন তাকে সত্যিই ভালোবাসত। কিন্তু জীবন
তাদের একসাথে থাকতে দেয়নি। চাদনী চিঠিটা বুকের সাথে চেপে ধরে বলে, "চন্দন,
আমি তোমাকে কখনও ভুলব না। তুমি আমার হৃদয়ের একান্ত অংশ হয়ে থাকবে
চিরকাল।"
রাত গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে, কিন্তু চাদনীর মনে এখন একটা
শান্তি আসে। সে জানে, তার ভালোবাসা সত্য ছিল, আর সেই সত্য ভালোবাসা কখনও
হারিয়ে যায় না। তাদের ভালোবাসার গল্প হয়তো অসমাপ্ত, কিন্তু সেই ভালোবাসা
চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।
এই বিরহের মধ্যেও চাদনীর এক নতুন শক্তি
খুঁজে পায়। সে বুঝতে পারে, ভালোবাসা শুধুমাত্র পাশে থাকার নাম নয়,
ভালোবাসা হলো হৃদয়ে একে অপরকে চিরকাল ধরে রাখা।
এভাবেই চাদনীর জীবনের একটি অধ্যায় শেষ হয়, কিন্তু তার হৃদয়ে শুরু হয় এক নতুন ভালোবাসার গল্প-----------
সংগ্রহীত-
Sunday, June 23, 2024
বাবা-ছেলের অটুট-বন্ধন পড়লেই চোখে জল এসে যাবে
তিতাস আর তার পিতা
গ্রামের নাম ছিল সৈয়দপুর। সেখানে বাস করত এক ছোট্ট মেয়ে, নাম তিতাস। তিতাসের বয়স দশ বছর, কিন্তু মনের দিক থেকে সে অনেক পরিণত। তার বাবার নাম ছিল শুনিল, পেশায় তিনি একজন কৃষক। তাদের ছোট্ট ঘর, সামান্য জমি আর গরুর গাড়ি - এটাই ছিল তাদের সব।
তিতাসের মা মারা গিয়েছিল অনেক আগেই। তাই তিতাস আর শুনিল একে অপরের জন্য সবকিছু ছিল। তিতাস তার বাবার কাজে সাহায্য করত, রান্না করত, এবং সন্ধ্যাবেলায় বাবার কোলে মাথা রেখে গল্প শুনত। শুনিল তার ছেলের প্রতি ছিল অত্যন্ত স্নেহশীল।
একদিন সকালে, শুনিল মাঠে কাজ করতে গিয়েছিল। তিতাস একা ঘরে বসে ছিল, হাতে তার মায়ের একটা পুরোনো চুড়ি। হঠাৎ করে একটা তীব্র বজ্রপাত হয়, সঙ্গে সঙ্গেই তিতাসের মনে একটা অশুভ আশঙ্কা জন্মায়। সে দৌড়ে মাঠে যায় এবং দেখে তার বাবা মাটিতে পড়ে আছে। তিতাসের কান্না বেরিয়ে আসে। শুনিল আর সাড়া দিচ্ছিল না।
তিতাস গ্রামবাসীদের ডাকল। সবাই এসে শুনিলকে বাড়িতে নিয়ে গেল। গ্রামের ডাক্তার এসে জানাল, শুনিল হঠাৎ স্ট্রোক করেছে। গ্রামের মানুষের সাহায্যে শুনিলকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিতাস হাসপাতালে তার বাবার পাশে বসে ছিল, তার ছোট্ট হাত দিয়ে বাবার হাত ধরে ছিল।
দিন গড়াল, তিতাসের বাবার অবস্থা ধীরে ধীরে ভালো হতে শুরু করল। ডাক্তার জানাল, সঠিক যত্ন আর ভালো খাবার পেলে শুনিল শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবে। গ্রামের মানুষজন সাহায্য করল, তাদের খাবার ও ওষুধের জোগান দিল।
শুনিল সুস্থ হয়ে ফিরে এল তার ছোট্ট ঘরে। তিতাস আনন্দে কেঁদে ফেলল। বাবাকে আবার কাছে পেয়ে সে যেন পৃথিবীর সমস্ত সুখ পেয়ে গেল। শুনিল তিতাসের মাথায় হাত রেখে বলল, "তুই আমার শক্তি রে বাব। তোর জন্যই আজ আমি বেঁচে আছি।"
তিতাস আর তার বাবা আবার সেই আগের মতো সুখে শান্তিতে জীবন কাটাতে লাগল। তাদের ভালোবাসা ছিল অটুট, যা কোনো ঝড়-ঝঞ্ঝা তাদের জীবন থেকে কেড়ে নিতে পারেনি। তিতাসের চোখে ছিল সপনো আর মনে ছিল অসীম সাহস। তারা জানত, যত বাধাই আসুক, একসঙ্গে থাকলে সবকিছু পার হওয়া সম্ভব।